বিমানের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা নেই। তবে টিকেটিং সিস্টেম ক্লোজ রয়েছে আগামী মে মাস থেকে। ফলে অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে প্রবাসীরা ধারণা করছেন; এপ্রিলের পর থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সিলেট-ম্যানচেস্টার রুটে বিমানের ফ্লাইট। এ নিয়ে নর্থ যুক্তরাজ্যের প্রবাসীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ওখানকার বিমান কর্মকর্তারাও বুঝিয়ে দিচ্ছেন এ রুটে ফ্লাইট বন্ধ হতে যাচ্ছে। অজুহাত কী? সেটি এখনো স্পষ্ট নয়। তবে দুটি কারণ হতে পারে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে যাত্রী সংকট।

এ অভিযোগ মানতে নারাজ প্রবাসীরা। আর অপরটি হচ্ছে; বিমানের উড়োজাহাজ সংকট। প্রবাসীদের যুক্তি হচ্ছে; যুক্তরাজ্য রুটে যে দুটি ফ্লাইট পরিচালনা করা হয় সে ফ্লাইটগুলো কখনোই লোকসানে থাকে না। অথচ বিশ্বের কিছু কিছু রুটে বিমানের ফ্লাইটে যাত্রী না থাকলেও ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে। সিলেটের ট্রাভেলস ব্যবসায়ীরা মানবজমিনকে জানিয়েছেন, কয়েক মাস আগে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সিলেট-ম্যানচেস্টার রুটে যাত্রী সংখ্যা কিছু কমে গিয়েছিল। কিন্তু পরে সেটি স্বাভাবিক হয়ে যায়। এখন ওই রুটে অনেক সময় টিকিটের সংকট দেখা দেয়।
আর হিথ্রো রুটে সব সময় টিকিট সংকট থাকেই। এ কারণে লন্ডন সহ যুক্তরাজ্যের অন্যান্য এলাকার যাত্রীরাও ম্যানচেস্টার রুট ব্যবহার করেন। এ ছাড়া নর্থ যুক্তরাজ্যের লাখ লাখ প্রবাসী এ রুট ব্যবহার করেন। সিলেট-লন্ডন ফ্লাইট রুটে বিমান অনেক আগে থেকেই ফ্লাইট পরিচালনা করে আসছে। কয়েক বছর আগে সেটি ঢাকা থেকে করা হতো। পরে সিলেটের যাত্রীদের দাবির মুখে সিলেট-হিথ্রো ফ্লাইট চালু করা হয়। বর্তমানে সপ্তাহে চার দিন এ রুটে বিমানের তরফ থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করে আসছে। এর মধ্যে রয়েছে শুক্রবার, শনিবার, রোববার ও বুধবার। সপ্তাহে চারটি ফ্লাইট দেয়ার পরও এ রুটে যাত্রী সংখ্যা বেশি। প্রায় সময়ই টিকিটের সংকট লেগেই থাকে। আর সিলেট-ম্যানচেস্টার রুটে সপ্তাহে রোববার ও মঙ্গলবার দুটি ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে। আগে এ রুটে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করা হতো। সিলেট থেকে নিউ ইয়র্ক রুটে বিমানের ফ্লাইট চালু করার দাবি দীর্ঘদিনের। এখনো এ রুটে বিমানের সেবা চালু হয়নি। এ কারণে ম্যানচেস্টার ফ্লাইটকে ট্রানজিট দিয়ে নিউ ইয়র্ক রুটে চালু করার চিন্তাভাবনা ছিল। বিগত দিনে সরকারের তরফ থেকে এ ব্যাপারে আশ্বাসও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই আশ্বাস আর বাস্তবায়িত হয়নি। উল্টো সিলেট-ম্যানচেস্টার ফ্লাইট বাতিলের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ও শিপার এয়ার ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী খন্দকার শিপার আহমদ জানিয়েছেন- সিলেট-ম্যানচেস্টার ফ্লাইটকে ট্রানজিট ফ্লাইট করার চিন্তাভাবনা ছিল। কিন্তু সেখান থেকে নীতিনির্ধারক মহল সরে এসেছেন। এখন এই রুটে ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়ার প্রক্রিয়া যদি হয় তবে সেটি হবে দুঃখজনক। তিনি জানান, আমরা এখন পর্যন্ত ঘোষণা পাইনি। তবে সিস্টেমে দেখাচ্ছে এপ্রিলের পর থেকে আর ফ্লাইটের কোনো অস্তিত্ব নেই। ফলে কী সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে সেটি নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বারের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও যাত্রীক ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী আলহাজ আব্দুল জব্বার জলিল জানিয়েছেন- যুক্তরাজ্য ও জেদ্দা রুট হচ্ছে বিমানের সফল ব্যবসার অন্যতম রুট।
এ দুটি রুটে বিমান সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করে। এখন যাত্রী সংখ্যাও বেশি। চাহিদা থাকার পরেও ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়া হলে হতাশ হওয়া ছাড়া কিছু করার নেই। তবে; আমরা এখনো অপেক্ষায় আছি বিমান কর্তৃপক্ষ কী সিদ্ধান্ত নেয়। এদিকে দীর্ঘ ৮ বছর বন্ধ থাকার পর প্রবাসীদের দাবির প্রেক্ষিতে ২০২০ সালে সিলেট-ম্যানচেস্টার রুটে বিমানের ফ্লাইট চালু করা হয়েছিল। এরপর থেকে নিয়মিতভাবে এ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রথমে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট চালু রাখা হলেও এখন কমিয়ে দুটি ফ্লাইটে নিয়ে আসা হয়েছে। তবে যাত্রী সংখ্যা যে কমছে না সেটি ট্রাভেলস ব্যবসায়ীরাই জানিয়েছেন। তাহলে কেন বিমান কর্তৃপক্ষের এ টালবাহানা।
এ ব্যাপারে বিমান সিলেট অফিসের ম্যানেজার শাহ নেওয়াজ মজুমদারও কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি জানান- সিলেট-ম্যানচেস্টার রুটে ফ্লাইট বন্ধের ব্যাপারে এখনো বিমানের নীতিনির্ধারক মহল থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে এপ্রিল পর্যন্ত সিস্টেমে টিকিট আছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত অনযায়ী টিকিটিং সিস্টেম চালু হবে বলে জানান তিনি। এদিকে সিলেট-ম্যানচেস্টার রুটে বিমানের ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন নর্থ ইংল্যাল্ডে বসবাসরত প্রায় ৩ লাখ সিলেটি নাগরিক। তারা জানিয়েছেন, অতীতে একই প্রক্রিয়ায় ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এ কারণে তারা এবারো ফ্লাইট বন্ধের আশঙ্কা করছেন।
ইউ কে এন আর বি সোসাইটি’র পক্ষ্য থেকে সিলেট-ম্যানচেস্টার বিমান ফ্লাইট বন্ধের প্রতিবাদে ম্যানচেস্টারস্থ সহকারী হাইকমিশনে স্মারকলিপি প্রদান

২৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় ম্যানচেস্টারস্থ সহকারী হাইকমিশনে ইউ কে এন আর বি সোসাইটি’র নেতৃবৃন্দ হাইকমিশনার মোহাম্মদ জুবায়েদ হোসেন এর কাছে বাংলাদেশ বিমানের সিলেট-ম্যানচেস্টার-সিলেট-ফ্লাইট বন্ধের পাঁয়তারার প্রতিবাদে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
সহকারী হাইকমিশনার মোহাম্মদ জুবায়েদ হোসেন দূতাবাস প্রধান আবু সালেহ মোহাম্মদ মুছা কে সাথে নিয়ে স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করবেন এবং এই ফ্লাইটটি বন্ধ না হওয়ায় ব্যাপারে চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন।
স্মারকলিপি প্রদান উপলক্ষে হাইকমিশনের উদ্যোগে আলোচনা সভায় উপস্থিত এন আর বি সোসাইটির নেতৃবৃন্দ বিমান বাংলাদেশ এর সিলেট-ম্যানচেস্টার-সিলেট রুটের ফ্লাইটের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন, এবং এই ফ্লাইটটি বন্ধ না করার দাবি জানিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।নেতৃবৃন্দ জানান, সিলেট-ম্যানচেস্টার-সিলেট রুটে জুলাই ২০০৬ থেকে ফ্লাইট চালু হয়। এরপর কয়েকবার বন্ধ হওয়ার পর ডিসেম্বর ২০২১ থেকে তিনটি ফ্লাইট দিয়ে এই রুটে সার্ভিস চালু রাখা হয়। বর্তমানে একটি ফ্লাইট কমিয়ে দু’টি ফ্লাইট চালু রাখা হয়েছে।
এ সময় হাইকমিশনার মিষ্টার হোসেন সকলের বক্তব্য মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করেন এবং এ ব্যাপারে ত্বরিৎ ব্যবস্থা নেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

এসময় ইউ কে এন আর বি সোসাইটির নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন,মিজানুর রহমান মিজান, জুনেদ আহমদ, মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন, ইসমাইল হোসেন,হিরা মিয়া, মিজানুর রহমান লিটু,আসকির বেগ, আব্দুল ওয়াদুদ, আব্দুল মালেক, বশির আহমদ প্রমুখ।