বাংলাদেশে নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে নতুন করে বিতর্ক ও আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে ভোটের সঠিক প্রতিফলন, সব দলের অংশগ্রহণ এবং সংসদে ভারসাম্যপূর্ণ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে আলোচনায় এসেছে পি.আর. সিস্টেম নির্বাচন বা অনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচন পদ্ধতি।

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত রয়েছে প্রথমে বিজয়ী হয় এমন একক আসনভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতি (First-Past-The-Post – FPTP)। এই ব্যবস্থায় একেকটি নির্বাচনী আসনে যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পান, তিনিই জয়ী হন, এমনকি যদি তিনি ৫০ শতাংশের কম ভোটও পান। এই ব্যবস্থায় ছোট রাজনৈতিক দল এবং বিকল্প মতের প্রতিফলন সংসদে ঠিকভাবে ঘটে না—এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের।


🔍 পি.আর. সিস্টেম কী?

Proportional Representation (পি.আর.) পদ্ধতিতে, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে সংসদে আসন পায়। যেমন, কোনো দল যদি মোট ভোটের ২০% পায়, তবে তারা মোট আসনের কাছাকাছি সংখ্যক আসন পাবে। এতে সংসদে সবার মতামতের তুলনামূলক ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়।


⚙️ পদ্ধতির ধরন ও কার্যপ্রণালী:

পি.আর. সিস্টেমের বিভিন্ন রকমভেদ রয়েছে। সবচেয়ে প্রচলিত হলো:

পার্টি লিস্ট সিস্টেম: ভোটাররা কোনো দলকে ভোট দেন। দলগুলো ভোটের অনুপাতে আসন পায়।

সিঙ্গেল ট্রান্সফারেবল ভোট (STV): ভোটাররা প্রার্থীদের পছন্দক্রম অনুযায়ী ভোট দেন। এতে একজনের বেশি প্রতিনিধির নির্বাচন হয়।

মিক্সড মেম্বার প্রোপোরশনাল (MMP): সরাসরি প্রার্থী ও দল—দুই ধরণের ভোট দেওয়া হয়। নিউজিল্যান্ডে এটি ব্যবহৃত হয়।


🌍 আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট:

পি.আর. পদ্ধতি বর্তমানে জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইসরায়েলসহ বহু দেশে কার্যকরভাবে চালু রয়েছে। এসব দেশে সংসদে নানামুখী রাজনৈতিক অবস্থান এবং মতবাদ প্রতিফলিত হয়, যা গণতান্ত্রিক পরিপক্বতার লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত।


🗣️ বাংলাদেশে প্রয়োগযোগ্যতা ও চ্যালেঞ্জ:

বিশ্লেষকরা বলছেন, পি.আর. সিস্টেম চালু হলে:

ছোট দল ও সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়া সহজ হবে।

সংসদে বহুমাত্রিক মতামতের উপস্থিতি বাড়বে।

রাজনৈতিক মেরুকরণ কিছুটা কমবে।

তবে এ পদ্ধতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রয়েছে কিছু চ্যালেঞ্জ:

আইনি ও সাংবিধানিক সংশোধন প্রয়োজন।

ভোটারদের মধ্যে সচেতনতা ও প্রশিক্ষণ দরকার।

রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও ঐকমত্য ছাড়া এটি কার্যকর করা সম্ভব নয়।

By iNEWS