বাংলাদেশে গণজাগরণের মাধ্যমে নতুন অন্তর্বতীকালীন সরকার ক্ষমতায় । ক্ষমতা পাবার আগ থেকেই অর্থাৎ শেখ হাসিনার সরকারের পতন যখন ছাত্র-জনতার কাছাকাছি, ঠিক তখন থেকেই একটা অপশক্তি মাঠে নেমেছে । যে কোন গণ জাগরণেই এরকম অপশক্তি বিভিন্নভাবে ঢোকে পড়ার ইতিহাস আছে বিভিন্ন দেশেও। তাই বাংলাদেশের প্রেক্ষিত বিবেচনায় বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপিসহ দূর্ণিতীবাজদের স্থাপনাগুলোতে আক্রমণকে অনৈতিক বলতে পারব ঠিকই, কিন্তু অস্বাভাবিক বলা যাবে না । তবে দেশের গুরুত্বপূর্ন স্থাপনাগুলো পুড়ানোর মধ্যি দেশের সম্পদহানী করা হয়েছে প্রচুর । যাতে কোন সুস্থ বিবেকসম্পন্ন মানুষ সমর্থন দিতে পারে না । যদিও মাত্র ক’টা দিনে শত শত মানুষের নিহত হবার ক্ষোভই এ অস্থিতিশীলতার প্রধান কারন । তাছাড়া বছরের পর বছর ধরে সৃষ্ঠ রাজনৈতিক অরাজকতাতো আছেই ।

বাংলাদেশের পূর্ববর্তী সরকারের অর্থাৎ সদ্য ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সুবিধাভোগী অধিকাংশই দেশের মোট জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগুষ্ঠির । সংখ্যালঘু জনগুষ্ঠিরও অনেকেই রাষ্ট্রীয়ভাবেও অনেকেই সুবিধাভোগী । প্রত্যেক সরকারের আমলেই দলের নিজস্ব মানুষগুলো বিভিন্নভাবেই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয় । কিন্তু বিগত সরকারের আমলের সুবিধাভোগীদের আঙ্গুল বটগাছ হয়ে এমন ডাল-পালা বিস্তার করেছিলো যে, এদের ছায়ায় এমনকি দলের ভেতরেও নীচের সব ঘাসগুলো মরে যায় । জনগণেরতো নাভিশ্বাস উঠে । এবং এই বটগাছ হওয়া মানুষদের মাঝে পিকে হালদার থেকে শুরু করে ওসি প্রদীপের মত অনেকেরই নাম উঠে আসবে ।

সেকারনে বাস্তবতাকে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই । অবৈধভাবে সুবিধাভোগী হল একটা শ্রেনী, এই শ্রেনীতে যেমন হিন্দু থাকে তেমনি থাকে মুসলমানরাও । আসলে হিন্দু-মুসলিম কোন ব্যাপার নয় এখানে । ‘মাইনরিটি’ শব্দটি পৃথিবীর সব দেশেই আছে । ব্রিটেন-আমেরীকায় আমরা সংখ্যালঘু । এমনকি কাগজে-পত্রে নিজেদের এথনিক পরিচিতি লিখে দিয়ে ব্রিটেনে এটা আমরা প্রমান করি । ভারতে মুসলমানরা সংখ্যালঘু । তবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে্একটা দেশের সরকার সরকার কোন্ দৃষ্টিতে দেখছে, এটা হল আলোচনার বিষয় । যেমন ব্রিটেনে রাষ্ট্রীয় বর্ণবাদ নেই, তবে একটা বর্ণবাদী ছোট্ট গুষ্ঠি আছে । ব্রিটেনে সম্প্রতি হঠাৎ করে বর্ণবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে । অভিবাসন ইস্যূকে কেন্দ্র করে বর্ণবাদীরা সামনে এসে এমনকি ভিন দেশী ম্বেতাঙ্গদেরও আক্রমন করে দেশের নিরাপত্তা হুমকীর মাঝে নিয়ে আসে । আর সেজন্য ব্রিটেনের মানবতাবাদী যারা বৈষম্যহীন রাষ্ট্রে যারা বিশ্বাস করে, অর্থাৎ বড় একটা ব্রিটিশ জনগুষ্টি এর প্রতিবাদে এমনকি রাস্তায় নেমে এসেছে এবং এই অপশক্তির বিরুদ্ধে অভিবাসীদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে বুকটান করে। এবং মাত্র এই ক’দিনের ব্রিটেনে সাম্প্রদায়িক কিংবা বর্নবাদীদের কঠোর ভাবে দমন করছে রাষ্ট্র এবং এরই মধ্যে শত শত বর্ণবাদীদের আটক করেছে, এখনও সিসিটিভি ক্যামেরা দেখে এদের আটক করছে । এমনকি ১৩ বছরের কিশোরও আটক হয়েছে । এদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনছে, স্বস্থি নামছে এখানে । ভারতে গনতন্ত্র আছে, কিন্তু সেখানে আছে এখন রাষ্টীয় সাম্প্রদায়ীকতা কিংবা বর্ণবাদ। মোদী সরকারের মুল অস্ত্রটাই হল মুসলিমদের প্রতি বিষোদগার, অর্থাৎ সেখানে আছে রাষ্ট্রীয় সাম্প্রদায়িকতা । অথচ সেখানকার অন্যান্য দলগুলো রাষ্ট্রীয় ঐ সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কথা বলছে মোদী সরকারের সূচনাকাল থেকেই ।

বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সাম্প্রদায়িকতা নেই, সেখানে কিছু সাম্প্রদায়িক অপশক্তি আছে, যা আমরা বিগত সরকারের আমলেও দেশকে অশান্ত করতে দেখেছি । এই সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কথা সকলের ধারনার মধ্যে কম-বেশী অবশ্যই আছে। সংখ্যালঘু একটা বাস্তবতা, এই সংখ্যালঘুদের রাষ্ট্র কিভাবে দেখছে এটাই বিবেচনার ।অন্যদিকে ছাত্র-জনতার যে গণজাগরন, এতে মৌলবাদীদের সমর্থনকে রাখ-ঢাক করা যাবে না । এরা ছিল । কারন রাষ্ট্রই এদের সুযোগ দিয়েছে এই উত্থানে । এবং স্বাভাবিকভাবে সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে । স্বাভাবিক সত্য হল এই জাগরনের সহায়ক শক্তি ছিল এরাও ।এখন অনেকেই বলছেন, সংখ্যালঘুদের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। শত শত সুবিধাভোগীদের মাঝে প্রদীপের বাড়িতো থাকতেই পারে, একজন পিকে হালদারের সাথের সহযোগী তার কয়েকজন আত্নীয়তো থাকতে পারেই । আর সেই বিচেনায় পিকে হালদার কিংবা প্রদীপের মত মঅনেকর সুবিধাভোগী স্বজন এই নাজেহালের শিকার হওয়াটা অস্বাভাবিক নয় । এ নাজেহালকে যারা সংখ্যালঘু আক্রমন হিসেবে চালিয়ে দিতে চান, তারাই মূলত সাম্প্রদায়িক অপশক্তি । তবে সাধারন সংখ্যালঘুদের কেউ কেউ এ আক্রমণের শিকার হচ্ছেন, যেমন হচ্ছেন অনেক মুসলিম নাগরিকও ব্যক্তিগত রোষানলের । কিন্তু এর জন্য ‘সেইভ হিন্দু’ বলে ক্যাম্পেইন চালানো এক ধরনের সাম্প্রদায়িক উস্কানী ছাড়া আর কিছু নয় । উল্লেখ করতে চাই, বিভিন্ন জায়গায় বঙ্গবন্ধুর স্ট্যচু থেকে শুরু করে লালনের স্ট্যচু কিংবা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিতে নির্মিত স্থাপনায় ভাংচুর করা কিংবা বেগম রোকেয়া নিয়ে বাজে মন্তব্য করা কুলাংগাররা নিঃসন্দেহে উগ্র মৌলবাদী জঙ্গী ।

এরা সময়ে সময়ে এটা করেছে, এবং বাংলাদেশ এদের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার লড়াকু এ প্রজন্ম এবারও শক্তহাতেই এর বিপরীতে দাঁড়িয়েছে । লালনের স্ট্যচু আবার শ্রদ্ধা-সম্মানের সাথেই নিজ জায়গায় বসানো হয়েছে, বেগম রোকেয়ার প্রতি উগ্রদের আচরন কল্কে পায় নি, পরিস্কার হয়েছে । নুতন করে গ্রাফিতি আঁকছে তরুন-তরুনীরা , মৌলবাদী জঙ্গীদের প্রতি তারা করছে ঘৃণিত উচ্চারন, এবং এটাই বাংলাদেশ, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ । একাত্তুরের চেতনার বাংলাদেশ ।সুতরাং সংখ্যালঘু শ্লোগান তুলে যারা দেশকে আরও অশান্ত করে তোলার পাঁয়তারা করছেন, তাদেরকে আমি সাম্প্রদায়িক অপশক্তির অংশ হিসেবেই মনে করি ।

By iNEWS