তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছিল না, মানুষকে নির্ভর করতেই হতো গণমাধ্যমের উপর । সেসময় বিটিভিকে বলা হত সাহেব-বিবি-গোলামের বাক্স । এ জায়গা থেকে কোনকালেই বেরিয়ে আসতে পারে নি সরকার নিয়ন্ত্রিত এই প্রতিষ্ঠান, তথা এই গণমাধ্যম । এরশাদ বিরোধী আন্দোলনেও আমরা দেখেছি, যখন আন্দোলনে গতি পেতো , তখন সরকার নিয়ন্ত্রিত পত্রিকাগুলো পাঠকদের চোখ ফেরাতে লেগে যেতো ।
তখন সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রভাবশালি সাপ্তাহিকী ছিল বিচিত্রা। সেই পত্রিকাটি প্রায়ই তখন জামাত-শিবিরের কসাইপনার উপর কাভার স্টরি করতো । এ ধারাটি সবকালেই ছিল, অর্থাৎ আন্দোলনমূখি জনতার দৃষ্ঠি ফেরানোর একটি রাজনৈতিক তীর ছিল এটা সব সরকারেরই । শাষকরা তাদের প্রয়োজনেই বিভিন্ন সময় দেখিয়েছে, জামাত একটা আতংকের নাম । অথচ জামাত-শিবির কোন না কোনভাবে আশকারা দেয়া হয়েছে শাষকদের পক্ষ থেকেই সময়ে সময়ে ।সেজন্য স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি বিরোধীতাকারী এবং পাকহানাদারদের হত্যাযগ্গের অংশীদার এই পার্টিটি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করার দাবী উঠেছে বার বার । কিন্তু কে শোনে কার কথা ।
বিএনপি আমলে সেটা হবারতো কথা নয়, কারন তাদের সরকারইতো ছিলো বিএনপি-জামাতীদের । এই সুযোগে বাংলাদেশে অন্যান্য মৌলবাদী দলগুলোরও উত্থান হয় । এবং জামাত-শিবিরের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা কিংবা ঘৃনার সুযোগটাক কাজে লাগায় চতুর মৌলবাদী শক্তিগুলো । নামে-বেনামে গজিয়ে উঠা ইসলামী দলগুলো ভারী হতে থাকে স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী এমনকি চিহ্নিত রাজাকারদের অংশগ্রহণে । এরা বিভিন্ন সরকারের ছত্রছায়ায় ডাল-পালা বিস্তৃত করতে থাকে । এবং জামাত ঠেকাতে এদেরও সরকার আশকারা দিতে থাকে । কিন্তু কি হলো শাপলা চত্বরে ? দুধ দিয়ে সাপ পুষলে কি হয় ? আজওতো মৌলবাদী শক্তির পোলাপানরা কেউ কেউ সংসদে বসে ইসলামের নসিয়ত দেয় ।এখন একটা গনবিষ্ফোরিত সময়ে জামাতকে নিষিদ্ধ করা হলো ।
এমন একটা সময়ে দলটাকে নিষিদ্ধ করা হল, যখন সরকারই দাবী করছে এ গণ বিষ্ফোরনের নেপথ্য কারিগর এরাই । আর সেজন্য এ প্রশ্নটা আসাটাই স্বাভাবিক, সরকার কি এর আগ এ বিষয়টা বুঝে উঠতে পারল না ? মেট্ররেল, বিটিভি, জেলখানা ভাঙ্গা প্রভৃতির পেছনে ঐ তাদেরই মদত । অথচ বিগত সময়ের দিকে তাকালে আমরা দেখি, বিভিন্ন সময়ই তারা এদের (জঙ্গি) গ্রেফতার করতে সফলতার পরিচয় দিয়েছে । সত্যিকার অর্থে বলতে কি রাজনীতির মাঠ থেকে সরকার অত্যন্ত সফলভাবেই এদের সরাতে পেরেছে । তাহলে গোয়েন্দারা কি ব্যর্থ । ডিজিটালাইজড বাংলাদেশের বিশেষ বিশেষ স্থাপনাগুলোর সিসিটিভি’র ফুটেজগুলোতে কেন আমরা দেখছি না জমাত কিংবা বিএনপি’র তান্ডবের চিত্র । মেনে নিলাম এরা ক্যামেরাগুলো ধ্বংশ করেছে, কিন্তু ধ্বংশ করার আগের মুহূর্তগুলোর ফুটেজতো এত সময়ে জনগণের দেখাটাতো উচিৎ ছিল । তাই এ প্রশ্নগুলোতো আসবেই ।তর্কের খাতিরে মেনে নিলাম এরা ধুর্ত, দুর্ধর্ষ । কিন্তু দুর্ধর্ষদের চিনে-জেনেও বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দাবি-সমর্থন থাকা সত্ত্বেও অনেক আগেই এদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলো না কেন ? দেরীতে হলেও এটা হয়েছে, কিন্তু গ্যারান্টি কোথায় এরা অন্য মৌলবাদী দলের পেটে ঢোকবে না, কিংবা নেই ।
আমিতো জানি ক্ষমতাসীন দলের দুএকটা জেলা-উপজেলার সভাপতি কিংবা সাধারন সম্পাদক পর্যন্ত আছেন কিংবা ছিলেন, যাদের নাম রাজাকারের লিস্টে আছে কিংবা তিনি বা তারা রাজাকারের সন্তান । প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিবকে জিগ্গাসা করেন কিংবা তাঁর দিকে তাকান ।জামাত-শিবির নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে । এটা সবসময়ের দাবী ছিল, ছিল না শুধু এসময়ের । তবুও হয়েছে ।
স্বাগত জানাই এ সিদ্ধান্তকে, কিন্তু অন্য মৌলবাদীদের পাশে রেখে জামাত মুক্ত বাংলাদেশ তথা সাম্প্রদায়িকতামুক্ত বাংলাদেশ কি আমরা আশা করতে পারি ?